বাংলাদেশের কৃষি ও রপ্তানি খাতে পাটের অবদান: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা।

 

পাট, যাকে আমরা "সোনালী আঁশ" বলে থাকি, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি কৃষিপণ্য। এক সময় পাট ছিল দেশের প্রধান রপ্তানি উপযোগী পণ্য। বর্তমানেও পাট ও পাটজাত পণ্য দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পাট উৎপাদনকারী দেশ। দেশের প্রায় ২০টি জেলার লক্ষ লক্ষ কৃষক পাট চাষের সঙ্গে জড়িত। শুধু চাষ নয়, পাট প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, বিপণন ও রপ্তানির সঙ্গে হাজার হাজার শ্রমিক যুক্ত, যা দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।

বাংলাদেশ সরকার পাটকে “জাতীয় আঁশ” হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে পাটের তৈরি ব্যাগ, চট, দড়ি, কাগজ, বস্তা, জিওটেক্সটাইল ইত্যাদির আন্তর্জাতিক চাহিদাও বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে একটি বড় অবদান।

পাট শিল্প শুধু অর্থনীতিই নয়, পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্য ব্যবহার পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়নের পথকে মজবুত করে।

তবে এই খাতটি এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যেমন: আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, কৃষকদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি ও রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি সহায়তা, গবেষণা ও প্রণোদনা বাড়ানো জরুরি।

সার্বিকভাবে, পাট বাংলাদেশের কৃষি ও শিল্প খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে এবং একে কেন্দ্র করে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও উজ্জ্বল।

Post a Comment

Previous Post Next Post